প্রথমে জেনে নেওয়া দরকার কাদের রক্ত নিতে পারবেনঃ
শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ নিরোগ ব্যক্তির রক্ত নিতে পারবেন। রক্ত দাতার বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে। শারীরিক ওজন ৪৫ কেজি বা এর বেশি হতে হবে। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে হবে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, পালস এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক এবং চর্মরোগ থেকে মুক্ত আছে কিনা তাও দেখে নিতে হবে।
কাদের রক্ত নিতে পারবেন নাঃ
- ক্যান্সারের রোগী।
- হিমেফেলিয়াতে যারা ভুগছেন।
- যারা মাদক গ্রহণ করেছেন।
- হেপাটাইটিস বি’ এবং সি’ যাদের আছে।
- সিজোফ্রেনিয়া (মানসিক ভারসাম্যহীন)।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালীন সময়ে, গর্ভবতী অবস্থায় ও সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ১ বছর পর পর্যন্ত রক্তদান করা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
- যাদের অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট আছে, অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ যেমনঃ এ্যাজমা, হাঁপানি যাদের আছে।
- যাদের এইচআইভি পজিটিভ তথা এইডস আছে।
- এছাড়া যকৃতের রোগী, যক্ষার রোগী, লেপ্রসি, মৃগী রোগী, পলিসাইথেমিয়া ভেরা প্রভৃতি রোগ থাকলে।
- যাদের ওজন গত ২ মাসে ৪ কেজি কমে গেছে।
- মাস ছয়েকের ভেতর বড় ধরণের দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বা অপারেশন হয়েছে – এমন মানুষের রক্ত নেওয়া যাবেনা।
রক্ত সংগ্রহের আগে  রক্তদাতার যে সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনঃ
এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা, জন্ডিস, পালস রেট, রক্তচাপ, শরীরের তাপমাত্রা, ওজন, হিমোগ্লোবিন টেস্ট, ব্লাড সুগার বা চিনির মাত্রা পরিমাপ করা, ইসিজি। পরীক্ষাগুলো খুব সাধারণ। তাই রক্ত সংগ্রহের আগে পরীক্ষাগুলো করা আছে কিনা দেখে নিতে হবে। বিপদের সময় যাতে বিলম্ব না হয়।
রক্ত নেয়ার আগে সতর্কতাঃ
- রক্ত নেয়ার আগে প্রয়োজন রক্তের গ্রুপ ঠিক আছে কিনা তা দেখে নেয়া।
- অপরিচিত পেশাদার রক্তদাতার রক্ত না নেয়া। পেশাদার রক্তদাতারা অনেকেই মাদকাসক্ত, দেহে বহন করে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ও এইডসসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী জীবাণু ও সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু।
- সবচেয়ে ভালো নিজস্ব আত্মীয়, বন্ধ-বান্ধব বা পরিচিত সুস্থ-সবল লোকের রক্ত নেয়া।
- স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে রক্তদাতার এইচবিএসএজি, এইচসিভি, এইচআইভি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, রক্তের অভাব ও অনিরাপদ রক্ত দুটিই জীবনের জন্য সমান হুমকি। তাই রক্তের বিকল্প শুধু রক্ত নয়, বরং ‘নিরাপদ রক্ত’।
- রক্ত নেয়ার ৪ ঘন্টা আগে রক্তদাতাকে ভালোভাবে খাদ্যগ্রহণ করাতে হবে। খালি পেটে রক্ত নেয়া ঠিক নয়।
- অ্যাসপিরিন ও এ জাতীয় ওষুধ খাওয়া অবস্থায় রক্ত নেয়া যাবে না। রক্ত নেয়ার ৪৮ ঘন্টা আগে এমন ওষুধ বন্ধ করতে হবে।
- কোনরূপ এনার্জি ড্রিংক রক্তদানের ২৪ ঘন্টা আগে সেবন করেছে কিনা জানতে হবে।
- শরীরে কোন উল্কি বা ট্যাটু করানো থাকলে বা নাক কান ফুটো করানো থাকলে দুই থেকে চার সপ্তাহ পর রক্ত নিতে হবে।
- অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা অবস্থায় রক্ত নেয়া উচিৎ নয়।
- বিষয়গুলো জরুরী তাই রক্তসংগ্রহকারীকে অবশ্যই এগুলো খেয়াল রাখতে হবে। একই সাথে রক্ত নেওয়ার সময় যে সুঁচ ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিশ্চিত হয়ে নেবেন তা নিরাপদ কিনা। আপনার একটু অসাবধানতায় রক্তে বাসা নিতে পারে কোন মরণব্যাধির। তাই রক্তসংগ্রহ করতে অতিরিক্ত সতর্কতা রাখা উচিৎ।
রক্ত পরিসঞ্চালন করলে কী জটিলতা হয় তা জানা থাকা দরকারঃ
জীবন রক্ষার অন্যতম উপায় এই রক্ত পরিসঞ্চালন আবার কখনও কখনও তৈরি করতে পারে জটিলতা। তাই রক্তসংগ্রহকারী এবং রক্তদানকারীকে অবশ্যই এসব জটিলতা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবেঃ
- রক্তবাহিত রোগের সংক্রমণ আমাদের দেশে এখনও একটি প্রধান সমস্যা। হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইডসসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী জীবাণু সহজেই রক্তের মাধ্যমে রক্তগ্রহীতার দেহে প্রবেশ করতে পারে। এ পরিস্থিতির মূল কারণ রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে রক্তটি জীবাণুমুক্ত কি-না তা যথাযথভাবে পরীক্ষা না করা। অনুমোদনবিহীন ব্লাড ব্যাংকগুলোতেই এসব রক্ত বিক্রি করা হয়। আর তা আসে মূলত নেশাসক্ত পেশাদার রক্ত দানকারীদের থেকে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত বা ভেজাল রক্ত এসব ব্লাডব্যাংক থেকেই আসে।
- ভুলক্রমে এক গ্রুপের রক্ত অন্য গ্রুপের রোগীকে দিলে রক্ত হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। এ ধরনের ঘটনা কম হলেও একেবারেই হয় না তা নয়। এসব ক্ষেত্রে রক্ত সংগ্রহকারী ও পরীক্ষাকারী ব্লাডব্যাংক, চিকিৎসক অথবা নার্স যে কারও ভুল বা অসতর্কতাই দায়ী। রোগী সাধারণত বুকে-পিঠে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের অভিযোগ করে থাকে। চিকিৎসক দ্রুত ব্যবস্থা নিলে পরবর্তী জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়।
- এছাড়া যে কোনো পরিসঞ্চালনেই কাঁপুনি ও জ্বর আসা এবং অ্যালার্জি জাতীয় ছোটখাটো সমস্যা হতে পারে।
- যাদের কিছুদিন পরপর রক্ত নিতে হয় তাদের দেহে লৌহের আধিক্যসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
- অনেক সময় অধিক রক্ত দ্রুত প্রবেশ করলে বৃদ্ধ অথবা হৃদরোগীর হার্ট ফেইলিউর জাতীয় সমস্যা হতে পারে।
রক্ত যে কোনো সময় প্রয়োজন হতে পারে, এ কথা মনে রেখে আমরা যদি এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখি তবে রক্ত পরিসঞ্চালনের সমস্যা থেকে বেঁচে যায়।
সবসময় যেসব প্রস্তুতি রাখা ভালঃ  
- নিজের, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা।
- নিকটস্থ ব্লাডব্যাংকের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জেনে রাখা।
- শুধু নিবন্ধনকৃত ব্লাড দান ও গ্রহণ করা।
- পেশাদার রক্তদাতার রক্ত ক্রয় না করা।
- নিজে নিয়মিত রক্ত দান করা ও সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।
তথ্যসূত্রঃ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর ওয়েবসাইট।